ঢাকা | জুলাই ২৫, ২০২৪ - ১০:০৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

গোপনভাবে নারীর শরীরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, ক্ষতিপূরণ চাইলেন ৬৭ ভুক্তভোগী

  • জাগো নিউজ ডট নেট
  • আপডেট: Tuesday, October 3, 2023 - 11:56 pm
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 80 বার

বিশ্ব: গোপনীয়ভাবে নারীর শরীরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সংযুক্ত করার অভিযোগে এবার ডেনমার্কের সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করে গ্রিনল্যান্ডের ৬৭ জন নারীর একটি দল। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে জন্মহার সীমিত করার লক্ষ্যে কিছু কিশোরীসহ সাড়ে চার হাজার নারীর শরীরে বিশেষ ধরনের কয়েল (আইইউডি) লাগিয়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে তদন্ত কাজটি ২০২৫ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে, কিন্তু ভুক্তভোগী নারীরা, যাদের অনেকের বয়স এখন ৭০ এর বেশি তারা এখনই ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

গ্রিনল্যান্ড বর্তমানে ডেনমার্কের একটি আধা-সার্বভৌম অঞ্চল যা ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ডেনিশ উপনিবেশ ছিল।

দেশটির ন্যাশনাল আর্কাইভের রেকর্ডে দেখা গেছে যে, শুধুমাত্র ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে সাড়ে চার হাজারটি অন্তঃসত্ত্বারোধী ডিভাইস (আইইউডি) নারীদের শরীরে গোপনভাবে লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল। ১৩ বছরের কম বয়সী কিশোরীদের শরীরেও তাদের সম্মতি ছাড়া বা তাদের না জানিয়েই এই ডিভাইস সংযুক্ত করা হয়। সম্প্রতি ডেনিশ গণমাধ্যম ডিআর-এর একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্য বেরিয়ে আসে।

প্রতিবেদনের ওঠে আসে, ১৯৬৯ সালের শেষ নাগাদ, এই অঞ্চলের ৩৫ শতাংশ আদিবাসী নারী যাদের গর্ভধারণের সামর্থ রয়েছে তাদের শরীরে আইইউডি লাগিয়ে দেয়া হয়। আদিবাসীদের জন্মনিয়ন্ত্রণবিষয়ক ডেনমার্কের এই অভিযানটি ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল বলে জানা যায়। তবে সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানতে পেরেছে যে, এটি ১৯৭৫ সালের পরেও অনেক বছর চালু ছিল।

একজন নারী ২০০৯ সালে যখন গর্ভবতী হওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলেন সেই সময় তার শরীরে ডিভাইসটি শনাক্ত করা হয়। আরেক নারী বিবিসিকে ২০১৪ সালে জানিয়েছেন, কোনো রকমের অনুমতি ছাড়াই তার শরীরে একটি গর্ভনিরোধক ডিভাইস লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল।

এমন অভিযোগ তদন্তে ডেনিশ এবং গ্রিনল্যান্ড সরকার যৌথভাবে একটি কমিশন গঠন করে যার প্রতিবেদন দেয়ার দিনক্ষণ ঠিক করা হয় ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত।

তবে এই ৬৭ বয়োজ্যেষ্ঠ নারীদের একজন মনোবিজ্ঞানী নাজা লিবার্থ দাবি করেন, `আমরা তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে চাই না।` তিনিই প্রথম এমন ক্ষতিপূরণের দাবি তোলেন। তিনি বলেন, `আমরা বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক, যাদের ১৯৬০ এর দশকে আইইউডি ঢোকানো হয়েছিল, তারা সাধারণত ১৯৪০ এর দশকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এবং এদের সবারই বয়স ৮০ বছরের কাছাকাছি পৌঁছেছে। আমরা এখনই ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।`

লিবার্থ বলেন, কিছু ক্ষেত্রে, লাগানো ডিভাইসগুলোর অপেক্ষাকৃত বড় ছিল যা গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতা বা এমনকি বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়ে যায়। অনেক নারী যখন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে গিয়েছিলেন তখনই তাদের শরীরে এই অবাঞ্চিত ডিভাইসটির অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারেন।

তিনি ডেনিশ সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেন, জনকল্যাণে অর্থ ব্যয় সীমিত করার লক্ষ্যে গ্রিনল্যান্ডের জনসংখ্যার আকার নিয়ন্ত্রণ করতে এমন ন্যাক্কারজনক পদ্ধতির আশ্রয় নেয় ডেনমার্ক।

তিনি আরও বলেন, `এটি ইতিমধ্যে শতভাগ স্পষ্ট যে ডেনিস সরকার আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে এবং আমাদের শরীর ও জীবনের গুরুতর ক্ষতি করে মানবাধিকার আইন ভঙ্গ করেছে।

ভুক্তভোগীর পক্ষে তিনি বলেন, ‘অনুমতি ছাড়াই অথবা না জানিয়ে যাদের শরীরে গর্ভনিরোধক কয়েল/ডিভাইস লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল সেই সব নারীদের জনপ্রতি তিন লাখ ক্রোনার ( ৪২ হাজার ১৫০ ইউএস ডলার) ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

ভুক্তভোগী নারীদের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী ম্যাডস প্রামিং সোমবার (২ অক্টোবর) ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনের কার্যালয়ে তাদের পক্ষে একটি দাবি পাঠিয়েছেন। লিবার্থ বলেন, তিনি আশা করেন প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে গত বছর ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা চেয়েছেন। সেই সঙ্গে ছয়জনকে ক্ষতিপূরণ দেন।

গ্রিনল্যান্ডের জনসংখ্যা মাত্র ৫৭ হাজার। এটি বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ এবং উত্তরমেরুতে সবচেয়ে বড় এলাকা। এই অঞ্চলটির নিজস্ব পতাকা, ভাষা এবং প্রধানমন্ত্রী আছে। এটি ১৯৯১ সালে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। এর মুদ্রা, বিচার ব্যবস্থা এবং বৈদেশিক ও নিরাপত্তা বিষয়গুলো এখনও ডেনমার্কের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়।