ঢাকা | জুলাই ২৫, ২০২৪ - ৫:২৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

ঘর ছাড়া কয়েকটি পরিবার, শিক্ষার্থীদের নামে মিথ্যা মামলা, লাঠিসোটা দিয়ে মারামারি মামলায় উল্লেখ গোলাগুলি

  • জাগো নিউজ ডট নেট
  • আপডেট: Monday, May 6, 2024 - 8:08 pm
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 25 বার

নিজস্ব প্রতিবেদক

কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার ভাটিঘাগড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যা মামলার আসামি হয়েছে একটি পুরো গোষ্ঠী। যে কারণে বাড়িঘরে তালা লাগিয়ে পুলিশের ভয়ে চলে গেছে অনেক মানুষ। সেই সুযোগে তাদের বাড়িঘর ভাংচুর ও ঘরের জিনিসপত্র লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি ভাটিঘাগড়া ইউনিয়নের খার হাটি ও মাওলানা পাড়ায় গিয়ে লুটপাট ও ঘর ভাংচুরের চিত্র দেখা গেছে। ঘরের মালামাল ও আসবাবপত্র সহ ঘরের টিন খুলে নিয়ে গেছে প্রতিপক্ষের লোকেরা। একটি মামলা হলেই মামলার আসামিদের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। যারা বাড়িতে থাকে তাদের উপর চালানো হয় নির্যাতন নিপীড়ন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘাগড়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে বিভিন্ন সময় হাজাহাজিতে প্রাণ হারিয়েছে অনেক মানুষ। এসব মারামারি মূলত আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে হয়ে থাকে।

যে কোন সামান্য কথা বা বিষয় নিয়ে টেটা, বল্লম, রাম দা ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দু’পক্ষই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া ঐ গ্রামের মানুষেরা মোট সাতটি গ্রুপে বিভক্ত। এর মধ্যে ঘাগড়া ইউনিয়নের বোরহান উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল গং, শের জাহান গং সহ বেশ কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে।

এই গ্রুপগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মারামারি খুনোখুনির ঘটনা ঘটায়। এরপর প্রতি বছর পক্ষে বিপক্ষে দুইটা তিনটা মামলা করা হয় মিঠামইন থানা ও আদালতে। এমন ঘটনায় এলাকার অন্যান্য মানুষেরা আতঙ্কিত অবস্থায় থাকে।

প্রাণের ভয়, নির্যাতন, লুটপাট ও ভাংচুরের ভয়ে কেউ তাদের সম্পর্কে মুখ খুলতে চায় না। বর্তমানে আতঙ্কিত হয়ে সেখানকার মানুষেরা বসবাস করছে। এছাড়াও আইন শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় ঐ গ্রামে এখন ২৪ ঘন্টা মিঠামইন থানার কয়েকজন পুলিশ মোতায়েন থাকে।

এদিকে যাদের বাড়িতে ভাংচুর লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে তাদের কাউকেই বাড়িতে পাওয়া যায়নি। হত্যা মামলার আসামি হয়ে ঐ গ্রামের অন্তত ৫০ টির অধিক পরিবার গ্রাম ছাড়া। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের বিষয়ে ঘাগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ভাটিঘাগড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার খোকন মিয়াকে কল দিয়ে জানালেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মুখলেছুর রহমান ওই এলাকার বোরহান উদ্দিন চৌধুরী বুলবুলের পক্ষপাতিত্ব করেন।

২০১১ সালে ভাটিঘাগড়া এলাকার খলাপাড়া গ্রামের বোরহান উদ্দিন চৌধুরী বুলবুলের বিপক্ষে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়েছিলেন একই এলাকার মাওলানা পাড়া গ্রামের শুক্কুর মামুদের ছোট ছেলে শের জাহান। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে হেরে যান শের জাহান। নির্বাচনে বিপক্ষে অংশগ্রহণ করাতে বিভিন্ন সময় হয়রানির অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষ বোরহান উদ্দিন চৌধুরী বুলবুলের বিরুদ্ধে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় হয়রানির উদ্দেশ্যে শের জাহান গংদের ১৯টি মামলার আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে ১৭টি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে মিঠামইন থানা সূত্রে।

২ গ্রুপের মধ্যে লাঠিসোটা দিয়ে মারামারি হলেও মামলায় পুলিশ উল্লেখ করেছে গোলাগুলির

সম্প্রতি ভাটিঘাগড়া এলাকায় বাজার হাটির আবদুল হেলিম হত্যা মামলায় ৪০ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৪/১৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলার এজাহারে আবদুল হেলিমের ছেলে মো. ইমন বাম পায়ের উরুতে গুলিতে মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। তবে এলাকায় খোঁজ নিয়ে একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে ১৩ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে উভয় পক্ষের মারামারিতে টেটা বিদ্ধ হয়ে আবদুল হেলিম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ১৪ এপ্রিল সকাল পৌনে দশটার দিকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে মৃত্যু হয়। তবে টেটার আঘাতে আহত আবদুল হেলিম মারা যাওয়ার কথা না থাকলেও মারা গেছে। তবে গুলিতে মারা গেছে না কেউ মেরে শের জাহান গংদের ফাঁসিয়ে দিচ্ছে তা নিয়ে এলাকার একাধিক ব্যক্তির সন্দেহ রয়েছে মামলার স্বাক্ষীদের উপরে। এলাকাবাসী বলছেন, ২ গ্রুপের মধ্যে লাঠিসোটা দিয়ে মারামারি হলেও মামলায় পুলিশ উল্লেখ করেছে গোলাগুলির। এমন কোনো ঘটনা ঘটিনি।

মিথ্যা মামলা দিয়ে চুরি ডাকাতি-লুটপাট প্রতিরোধে নেই থানা পুলিশের ভুমিকা

প্রতিপক্ষের মিথ্যা মামলায় ঘরবাড়ি ছাড়া মানুষের দাবি, এই ঘটনার সময় প্রতিপক্ষের আঘাতে পরিবারের সদস্যসহ তাদের অনেক হাসপাতালে ভর্তি। মহৎ ডাকাত ও বর্তমান মেম্বার খোকন যগরুলসহ ৫০ থেকে ৬০ জন লোক তাদের উপর আক্রমণ করে। এসব ঘটনায় তাদের লোকজন ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অনেকের মাথায় ব্যাপক আঘাত লেগেছে । অনেকে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এরমধ্যে একজনের চক্ষু নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে। আহতের প্রথমে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে, সেখানে আহতদের কয়েকজনকে চিকিৎসা দিলেও তাহকিনসহ বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কা হলে ডাক্তার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে । পরে ডাক্তাররা ময়মনসিংহ মেডিকেল থেকে তাহাকিমকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করে। সেখানে জরুরিভাবে তার চক্ষু অপারেশন হয়। একেবারেই মুমূর্ষ অবস্থায় ছিল বললেই চলে।

সন্ত্রাসীদের আঘাতে ১০-১২ জন লোক ভীষণভাবে আহত হলেও ঘরছাড়া পরিবারের কেউ সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না পুলিশ বরং তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ’

সূত্রমতে জানা যায়, এই ঘটনায় কয়েকজন লোক ঘটনাস্থলে না থেকেও মামলায় তাদের আসামী করা হয়েছে। প্রতিপক্ষ থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে এবং মোটা অংকের টাকা পয়সা দিয়ে এই মামলাটি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

কেউ কেউ বলছে, এলাকার দুর্ধর্ষ ডাকাতদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এলাকার অর্ধশতাধিক পরিবারকে হয়রানি করছে বোরহান উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল ও তার সহযোগিরা। যার সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত রয়েছে ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও আবদুল হেলিম হত্যা মামলার ১৫ নং স্বাক্ষী ফখরুল ইসলাম খোকন ও ১৬নং স্বাক্ষী মো. মহুব শেখ ওরফে মহুব ডাকাত।

বাড়িঘর লুটপাট, ভাংচুর ও গুলিতে হত্যার বিষয়ে ভাটিঘাগড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. খোকন মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। কেউ আমাকে কিছু জানায়নি। এসময় পুনরায় জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটা গ্রাম্য বিষয়, দলাদলির দেশ। এখানে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা আমরা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি না। গুলিতে মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, এটার সুরতহাল রিপোর্ট আছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আছে। আমার মুখের কথায় তো হবে না।সবাই যেমন জানে আমিও তেমন জানি।

গোপন সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যানের নির্দেশেই হত্যা মামলার আসামির নাম লিখা হয়েছে এজাহারে। এলাকায় কোন ঘটনা ঘটলে তার মীমাংসা না করে উল্টো ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষের মানসিক সরলতার সুযোগ নেন। নিজের আধিপত্যকে পুঁজি করে বিভিন্ন সময় গ্রামের মানুষকে হয়রানি করেন তিনি।

এছাড়াও আরও অনেক অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।এসব অভিযোগের বিষয়ে একাধিকবার কল দিলেও চেয়ারম্যান কল রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে মিঠামইন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আহসান হাবীব খবরের কাগজকে বলেন, দুই পক্ষই বাড়ির রাস্তায় মারামারি করেছে। দুই পক্ষের লোকজনই গুরুতর আহত হয়েছে। ঘটনার পরেরদিন একজনের মৃত্যু হয়েছে। বাদীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার এজাহারে গুলিতে মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিভাবে মৃত্যু হয়েছে বলা সম্ভব না। মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে।

যাদের বাড়িতে ডাকাতি লুট হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা দেখবো।

তবে এই ঘটনায় কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার এসপি বলেছেন, কেউ যাতে হয়রানী না হয় সেই বিষয়টি মাথায় রেখে পুলিশ কাজ করবে। তাছাড়া যেসব ঘরবাড়িতে চুরি হচ্ছে, সেই বিষয়ে তদন্ত করা হবে। এছাড়া মামলায় যেসব শিক্ষার্থীদের নাম উঠে এসেছে সেই গুলোও দেখা হবে। কেউ হয়রানীর শিকার হবে না।

জাগো নিউজ/আইটি